Wednesday, 14 May 2008

একজন লেখকের প্রথম প্রকাশ এবং আত্মকথা


[এই লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। তাহলে এনামস্ প্রকাশন-এর মূলমন্ত্র বুঝতে সুবিধে হবে।]


শুরুটা শুরু থেকেই করতে চাই। সবকিছুরই তো শুরু বা ‘প্রথমা’ বলে একটা কথা আছে। তবে আমার বেলায়ও কেন এর ব্যতিক্রম হবে! হ্যাঁ, ১৯৯৯ইং সালের কথা। আমি তখন সেবা প্রকাশনীর বইয়ের প্রচন্ডতম ভক্ত ছিলাম। এর আগেও কমিকস্ ও রুপকথার বই পড়েছি প্রচুর, তবে এক রকম ঘোর লাগা ভাবটা ‘সেবা’ থেকেই শুরু। ঔই সময় সেবাতে ‘টিপু কিবরিয়া’ হরর কাব নামে একটা সিরিজ চালু করেছিলেন। আমি একদিন তাকে চিঠি লিখে অনুরোধ করলাম তিনি যেন তার পরবর্র্তী কোন বইয়ে আমার নামটা ব্যবহার করেন। টিপু কিবরিয়া পরের বইতেই আমার নামটা ব্যবহার করলেন এবং তারপরেও আরো একটা বইয়েও করলেন! ফোনে তার সঙ্গে আলাপ হলো বার কয়েক। তিনি খুশি হলেন আমার মতন একজন অন্ধভক্ত পেয়ে। কিন্তু আসল ব্যাপারটা হচ্ছে অন্যখানে। টিপু কিবরিয়া-কে আমি যখন চিঠি লিখেছিলাম তখন সেই চিঠি তিনি ছেপেছিলেন তার বইয়ে। সেই চিঠিটাই আমার জীবনে ভীষন রকম একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে। ছাপার অরে নিজের আস্ত নামটা দেখে আমি এতটাই কল্পনা প্রবন হয়ে পড়লাম যে, কি জানি কেন আমার মনে একটা দৃঢ় সংকল্প বাসা বাঁধতে শুরু করলো। মনে হয় ঔই সময়টা থেকেই, আমিও ভাবতে শুরূ করলাম যে কি করে আমিও বড় বড় লেখকদের মতন বই লিখব, গল্প লিখব।প্রচুর বই পড়তে লাগলাম। বহুমানের লেখার রীতি কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকলাম। কেননা, আমার জানা ছিল-‘লিখতে হলে পড়তে হবে।’ প্রথম প্রথম লিখতে বেশ কষ্ঠই হত। এজন্যে কত খাতাপত্রই যে নষ্ঠ করেছি! গল্প মাথায় আসত না, গল্প মাথায় কাজ না করলেও যখন লিখতে বসতাম তখন শুধুমাত্র হাতের লেখা অসুন্দর হলেই সমানে নষ্ঠ হত প্রচুর পৃষ্ঠা।অবশেষে একদিন! ২০০১ সালের মে মাসে মাসিক আদর্শ রমণীতে ছাপা হয়ে গেল আমার প্রথম লেখা একটা ছোটগল্প। ঔইদিন আমি যে রকম খুশি হয়েছিলাম...সেই খুশি আর সীমাহীন আনন্দ হয়ত আর ফিরে পাব না। সেইদিনের সেই প্রাপ্তিটুকু তো অতীত অতীত হয়ে গেল নিমিষেই। এরপর, প্রচুর জাতীয় পত্রপত্রিকায় আমার ছোটগল্প,উপন্যাস,ছড়া-কবিতা,প্রবন্ধ ইত্যাদী ছাপা হতে লাগলো। কখনো ‘নাফে মোহাম্মদ এশা’ কখনো ‘মোহাম্মদ এনামুল হক এনাম’ আবার কখনো বা ‘নাফে মোহাম্মদ এনাম’ নামে। আসলে ‘নাফে এশা’ নামটা আমি অধিকাংশই ব্যবহার করেছি ছড়া-কবিতায়,যদিও মাঝেমধ্যে গল্প-প্রবন্ধও ছাপা হয়েছিলো এ নামে। আর আসল নামটা, মানে ‘মোহাম্মদ এনামুল হক এনাম’ নামটা আমি শুধুমাত্র মাসিক শিশু কিশোর পত্রিকা ‘কিশোর তারকালোকে’ এবং ‘দৈনিক সিলেটের ডাকে’ শুধুমাত্র গল্পের েেত্র ব্যবহার করেছিলাম। বর্তমান নামটা তেমন ব্যবহার করিনি। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার এই ‘নাফে এনাম’ নামটাই কিন্তু আমাকে আমার মতন উঠতি লেখকদের ভীড়ে অন্যরকম একটা আসনে বসিয়েছে। যাইহোক, ছড়া-কবিতা এসব আমার লেখার বিষয় ছিলো না মোটেও। এসমস্ত লেখা আমি লিখতাম স্রেফ হাতে দ্রুততা ও প্রাঞ্জলতা নিয়ে আসার জন্যে। তবে একসময় ছেড়ে দিলাম এ জাতীয় লেখা। লেখালেখির একমাত্র বিষয় হিসেবে বেছে নিলাম হরর ও থ্রিলার ধাঁচটা। একচেঁটিয়াভাবে শুরু করলাম এ ধাঁচের লেখা। কিশোর তারকালোকে নিয়মিত ছিলাম। সত্যিকথা বলতে কি- একমাত্র কিশোর তারকালোকই আমাকে লেখালেখির কঠিন ময়দানে সাহস জুগিয়েছে। কিশোর তারকালোকে আমার প্রথম প্রকাশিত গল্পটি ছিলো ‘অলৌকিক প্রহর।’ এই গল্পটি আমি অবাঞ্ছিত প্রহর নামে পাঠিয়েছিলাম। তখন তৎকালীন সম্পাদক ‘আহমদ আজাদ’ আমাকে আমাকে চিঠি লিখে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি দু’চারজন পাঠকও অভিনন্দন জানালেন। এটা ২০০১ সালের নভেম্বরের কথা। শুরু হতে না হতেই আমার কপালে যে এত প্রাপ্তি ছিলো তা জানা ছিলো না। জানা থাকলে আমি হয়ত আরো অনেক বেশী কিছু চেষ্ঠা করে দেখতাম। মাঝেমধ্যে প্রশ্ন জাগে মনে, কেন এই লেখালেখি? আসলে মনের আনন্দে লিখি আপনা আপনি। আর যখন সমবয়সী নিরহংকারী বন্ধুরা প্রেরণা যোগায় তখন তো রীতিমতন স্বপ্নচারী কিশোরে পরিণত হই।আমার অনেকগুলো স্বপ্ন। বিখ্যাত হওয়ার খায়েশ তার মধ্যে একটা। কার না নেই এমন স্বপ্ন? সাহিত্য কিংবা সংস্কৃতিমনা বলতে যা বুঝায় আমি ঠিক তা নই বটে, তবে মনে হয় নিজের মনগড়া দুনিয়াতেই আমি তাই। আমি নিজেও জানি না লেখালেখিতে আমার কেন এতটা দুর্বলতা। তবে আমার ইচ্ছে আছে একদিন এইসব করেই প্রচুর টাকা পয়সা উপার্জন করব। আমার মা আমার এসমস্ত ব্যাপারে ভীষন বিরক্ত। এ নিয়ে নিয়মিতই তিনি আমার মগজ ধোলাই করেন। কিন্তু আমি থেমে থাকি না। পাগলের মতন লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হই।হঠাৎ! বই প্রকাশের নেশা চেপে বসলো মনে। নিজের একটা বই। ইতিমধ্যে অনেক লেখা জমা হয়েছে আমার। বই বের করার জন্যে যথেষ্ঠ। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে উৎস প্রকাশনে পান্ডুলিপি পাঠালাম। প্রকাশকের সাথে চিঠি আদান প্রদান চলতেই থাকলো। একসময় ফোন করে জানতে পারলাম টাকা ছাড়া হবে না। অন্যান্য প্রকাশনীর ধারস্ত হলাম, সবখানেই টাকা। সবারই একই অজুহাত-‘আপনি নতুন লেখক।’ বুঝতে পারলাম লেখালেখিতে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এত সোজা নহে। কিন্তু আমি আমিই। একটা বই যে বের করতেই হয় মশাই! এমনই দূর্যোগঘন মুহূর্তে পরিচয় হলো জনপ্রিয় গল্পকার কুটি কবিরাজের স্রষ্ঠা ‘আবদুল হাই মিনারের’ সাথে। তিনি তো আমার লেখা পড়ে রীতিমতন প্রশংসাই করলেন। এরপরও কি থেমে থাকা যায়! বই প্রকাশের ব্যাপারটা আরো পাকাপোক্ত স্বীদ্ধান্তে এলো। এরই ফাঁকে জীবনের সবচে’ অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেলো। বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশান লেখক ‘মুহম্মদ জাফর ইকবাল’-এঁর সঙ্গে প্রথমবারের মতন দেখা হলো। অটোগ্রাফ, ফটো তোলা সবই হলো এবং আমিও প্রচন্ডভাবে আসক্ত হলাম বই প্রকাশের ব্যাধিতে। অন্যদিকে লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি পরিচয় ঘটছে শহরের নামীদামী লেখক-কবিদের সঙ্গে। তাদের সাথে মিশে লেখার গতি বাড়লো। এভাবেই কেটে গেলো দু’য়েক বছর। এক সময় বুঝতে পারলাম, প্রকাশকের পেছনে ঘুরলে চলবে না, নিজেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। অবশেষে। নিতান্তই বাধ্য হয়ে অনেক কাঠখোর পুড়িয়ে নিজের খরচে ছাপতে সম হলাম আমার প্রথম স্বপ্ন, সর্বপ্রথম বই, রোমাঞ্চ গল্পগ্রন্থ-‘অলৌকিক প্রর্হ।’ উপল্যটা ছিলো একুশে বইমেলা,২০০৫ সাল। কিন্তু হাজারো লেখকের ভীড়ে মেলায় নিজের বইটি পাঠাতে সাহস পেলাম না। বরং উল্টোটাই করলাম। মেলা শেষ, লেখকদের ঢাকঢোল পেটানোও খতম। এবার আমি ঘোষনা করলাম আমার বইয়ের প্রকাশনা সংবাদ। সাপ্তাহিক বিচিত্রা, পাকি অনন্যা, মাসিক সিলেটবাজার, সিলেটের ডাকসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রিভিউ ছাপা হলো। বিজ্ঞাপন ছাপানোর পয়সা নেই তাই দেশের বিখ্যাত সব লেখকদের ঘরে বই পাঠালাম। কিছুদিন নিরবে কাটলো। সবকিছু থমথমে। তারপর। যাদের কাছে বই পাঠিয়েছিলাম তাদের অনেকেই হয় ফোনে নয়ত চিঠিতে ধন্যবাদ দেয়ার পাশাপাশি আমার বইয়ের প্রচ্ছদের তুলনামূলক প্রশংসা করলেন। এবং আমি বিশ্বাস করলাম এমন অনেক বিখ্যাতরা আছেন যারা সত্যিই বিখ্যাত, নচেৎ আমার মতন এক অপ্রতিষ্ঠিত লেখকের কদর করতেন না কেউ। শুধু কি তাই? এক সময় আমি যাদের বই পড়ে কেবলই তাদের সাথে পরিচিত হওয়ার, একটি বারের জন্যে দেখা করার স্বপ্ন বুনতাম সেইসব বিখ্যাত লেখকদের সাথে ফোনে কিংবা চিঠির মাধ্যমে প্রায়ই যোগাযোগ হওয়া কি আমার পে সম্ভব ছিলো? প্রত্যেক লেখকই আমাকে যথেষ্ঠ মূল্যায়ন করেছেন এবং করছেন। এত অল্প সময়ে, এত অল্প পরিশ্রমে আমার কপালে যে এইটুকু প্রাপ্তি জুটেই গেল তা কি অস্বীকার করার মত? তবে কি এ থেকে আমি ধরে নিতে পারি একদিন আমিও হবো একজন পাঠকের কল্পনার লেখক? হ্যাঁ, এ আত্মবিশ্বাসটুকু আমি করতেই পারি। একদিন আমার লেখা বইও পাঠকেরা কিনে পড়বে। আর এজন্যে আমাকে যা করার তা আমি করার প্রচেষ্ঠা চালাবো [অবশ্যই নিজের যোগ্যতার বিচারে]। এই তো সেদিনই মুহম্মদ জাফর ইকবাল আঙ্কলের সাথে পূনরায় দেখা হলো। তাকে আমার বইটা উপহার দিতেই তিনি খুশি হলেন এবং উপদেশ দিলেন-‘যদি তুমি সত্যিই ভালো লিখো তবে বড় বড় পত্রিকায় লেখা ছাপাও। দেখবে, তোমার জনপ্রিয় হওয়ায় আর বাধা থাকবে না।’ তাঁর দেয়া এ উপদেশটুকু আমার মনে এমনই গেঁথে গেলো যে নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশের খায়েশ অনেকটাই উবে গেলো। এখন শুধু আমি একটা স্বপ্ন দেখি-ভালো কিছু লিখবো, পাঠকের মন জয় করব আর অধির আগ্রহে অপো করব কখন একজন প্রকাশক এসে আমার দরজায় উঁকি মারেন। ঠিক যেদিন কোন প্রকাশক এসে এমনটা করবেন সেদিন আমি মনে করব আমি একজন লেখক হতে পেরেছি। এবং আমি মনে করি আমার মতন আরো যারা নবীন লেখক আছেন তাদের সংকল্পও আমার মতন একই হওয়া উচিত। জানাতে ভুলে গেছি- আমার নির্মিত একাধিক নাটকও আছে, কিছু গানের কথা ও সুর করেছি। আপাতত এসবই আমার শখের বিষয়। সবকিছু পরে আমি আরো একটা বিষয় নিয়েও ভাবি। সেটা হচ্ছে ‘মৃত্যু’ চিন্তা। আমি জানি আমার মৃত্যুর সাথে সাথে আমার সমস্ত সৃষ্ঠি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। প্রিয় পাঠক, এই ছিলো আমার লেখালেখিতে আত্মপ্রকাশ ও প্রথম বইটা প্রকাশের ইতিকথা। ধন্যবাদ।








Monday, 12 May 2008

এনামস্ প্রকাশন-এর প্রথম বই

[একটি হরর গল্প সংকলন]
নাফে মোহাম্মদ এনাম

মোট ছয়টি গল্প আছে এ বইটিতে। থ্রিলার,হরর,সাসপেন্স... আপনি অবশ্যই এ বইটি পছন্দ করবেন। তবে আপনি যদি ভালবাসেন ভৌতিকতা তাহলেই বইটি আপনার মন কাড়বে। আপাতত সংকলিত গল্পের নাম চেখে দেখুন:


১.মোনালিসার হাসি
২.ভুতূড়ে জনপদ
৩.প্রেত-মৃত্যু
৪.পাচ নম্বর কফিন
৫.প্রতিকৃতি
এবং
৬.অলৌকিক প্রহর।

আমার মনে হয় নামগুলো আপনাকে কাছে টানবে। যদি তাই হয় তাহলে আজই বইটি কেনার জন্য ক্লিক করুন:

এনামস্ প্রকাশন-এর দ্বিতীয় বই

জিঘাংসা
একটি থ্রিলার উপন্যাসিকা
নাফে মোহাম্মদ এনাম



এ উপন্যাসিকাটি আসলে একটা বড় গল্প।সেই সময় হাতে তেমন ভাল পান্ডুলিপি নাথাকায় এটাকেই বই আকারে প্রকাশ করতে হয়।আমার লেখা প্রথম এবং শেষ রোমান্টিক থ্রিলার।আর কখনো এমন লেখা প্রকাশ করার ইচ্ছে নেই।হরর গল্পকার হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেতে চাই।বইটা ছাপা হয়েছে অফসেট কাগজে।

নিচে তথ্যদেয়া হল:


প্রকাশকাল: ২০০৭ইং
স্বত্ত্ব: লেখক
প্রচ্ছদ: লেখক
পৃষ্ঠা: ৩২
দাম: ৩৫.০০ টাকা


বইটি পাবেন বাংলাদেশের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে।
এছাড়া বইটি থাকছে:

অথবা